এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম। বিতর্ক যেন তার পিছু ছাড়ছে না। তার ঘরের কাজের মেয়েও এখন কোটিপতি। ওই গৃহকর্মীর নাম মর্জিনা আক্তার। তার নামে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ছাড়াও মিলেছে বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ। তার নামে দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া মর্জিনার নামে কয়েকটি ব্যাংকে ২২টি এফডিআর’এ থাকা এক কোটি টাকা জমা রাখার সন্ধান মিলেছে। ইসলামী ব্যাংকে চাকরি দেখিয়ে নিজ নামে এ সম্পদ গড়েছেন মর্জিনা আক্তার ও তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
এতে দেখা যায়, চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রবর্তক মোড় শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নগদ ও চেকের মাধ্যমে এসব অর্থ জমা হলেও কিছুদিনের মধ্যে সেই অর্থ উত্তোলন করা হয়। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মর্জিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে এখন জমা আছে মাত্র ৬০৫ টাকা।
অন্যদিকে, ইসলামী ব্যাংকের পাঁচলাইশ চট্টগ্রাম শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে খোলা আরেকটি ব্যাংক হিসাবের খোঁজ মিলেছে। মেঘনা ভবন, প্যারেড কর্নার, এই ঠিকানা ব্যবহার করে খোলা ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়। এই অ্যাকাউন্টে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের স্থিতি ছিল চার লাখ ৭০ হাজার ৯০৩ টাকা।
এদিকে, ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় সাইফুল আলমের গড়া প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে শিবানন্দখিলা মোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে। এসব সম্পত্তি সাদ্দাম হোসেন ও তার স্ত্রী মর্জিনার নামে। নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব সম্পত্তি নিজেদের নামে করে নিয়েছে সাদ্দাম হোসেন ও তার স্ত্রী। এ জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের খামার।
এস আলমের বাসার কাজের মেয়ে মর্জিনা ও তার স্বামী সাদ্দাম এখন ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত। এস আলমের কল্যাণেই মিলেছে এ চাকরি। দুজনই একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের নামে ধোবাউড়া উপজেলা ডাকবাংলোর সামনেও জমি-জমা রয়েছে। এস আলমের নাম-পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাদ্দাম ও তার স্ত্রী মর্জিনার বিরুদ্ধে সরকারি পুকুর এবং জনসাধারণের যাতায়াতের রাস্তা দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে, একজন গৃহকর্মীর ব্যাংক হিসাবে কিভাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় এবং কীভাবে কোটি টাকার এফডিআর খোলা যায়; এ নিয়ে বিস্মিত খোদ ব্যাংক কর্মকর্তারা। মর্জিনার নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে টাকা কোন স্থান থেকে এসেছে, কারা জমা দিয়েছে এসব অর্থ, তা খতিয়ে দেখছে এনবিআর। কাজের মেয়ের ব্যাংক হিসাবে এত টাকা কিভাবে এলো, আবার সেই অর্থ কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে অনেকে বলছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের নেপথ্য নায়ক এস আলমের গৃহকর্মীর নামে কোটি টাকার সম্পদ থাকা একেবারে অস্বাভাবিক নয়।